বঙ্গবন্ধুর শিশুকাল রচনা ২০২২
আজ আমরা আপনাদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর শিশুকাল রচনা ২০২২।বঙ্গবন্ধুর শিশুকাল রচনা ২০২২| অনুগ্রহ করে পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
ছবির মতো গ্রাম। গ্রামের নাম টুঙ্গিপাড়া। গোপালগঞ্জ জেলা।
গোপালগঞ্জ তখন ফরিদপুর জেলার একটি মহকুমা ছিল। মধুমতি নদীর তীরে।
মধুমতির অনেক শাখা। এরকম একটি শাখা হল ব্যাগার নদী। এই নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়া। গ্রামটি গভীর মমতায় ছুঁয়ে গেল। মধুমতি গিয়ে যোগ দিল।
নদীর দুই ধারে কত গাছ! হিজল বরুণ তাল তমাল। কত বুনো ফুল! নদীর জলে বাঁশের বন ছায়া ফেলে।
চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। নদীতে অনেক নৌকা।
হলঘরে বসে নাবিক গলায় ভাটিয়ালী গান গায়। গাছে গাছে পাখি ডাকে। বাতাসে ভেসে বেড়ায় ফুলের ঘ্রাণ। কর্কশ শব্দে নদী বয়ে যাচ্ছে।
![]() |
বঙ্গবন্ধুর শিশুকাল রচনা ২০২২ |
প্রায় ২০০ বছর আগে টুঙ্গিপাড়ার কাছে প্রবাহিত হতো মধুমতি। নদীর তীরে বসতি গড়ে ওঠে। নদী ধীরে ধীরে বয়ে গেল। চারটি জাগরণের পর নতুন গ্রাম তৈরি হয়। শান্ত সুন্দর শান্ত পরিবেশ।
যাত্রা করতে হতো নৌকায়। বাঙালি জাতির মহান নেতা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম এই টুঙ্গিপাড়ায়।
দরবেশ শেখ আউয়াল ছিলেন ইরাকের বাসিন্দা। তিনি পবিত্র ধর্ম ইসলামের প্রচারক হিসেবে এদেশে আসেন। প্রায় 500 বছর আগে।
তার বংশধর শেখ বোরহানউদ্দিন টুঙ্গিপাড়ায় শেখ রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধুর দাদা এই বংশের শেখ আবদুল হামিদ। তার ছেলে শেখ লুৎফর রহমান ছিলেন বঙ্গবন্ধুর পিতা।
শেখ আবদুল হামিদের সময় থেকে এ পরিবারে ইংরেজি শিক্ষা শুরু হয়।
শেখ আবদুল হামিদ আকস্মিকভাবে মারা যান। তার বড় ছেলেও মারা যায়। এরপর পরিবারের দায়িত্ব পড়ে শেখ লুৎফর রহমানের ওপর। তারপর তিনি প্রবেশিকা পড়েন।
পড়ালেখা ছেড়ে চাকরিতে ঢুকে পড়েন। সেরেস্তাদার হয়ে গেল দেওয়ানী আদালত।
শেখ আবদুল হামিদের বড় ভাই শেখ আবদুল মজিদের কোনো ছেলে ছিল না।
চার মেয়ে ছিল। শেখ লুৎফর রহমানের সাথে তার ছোট মেয়ের বিয়ে দেন। সেই মেয়ে সায়রা তার সমস্ত সম্পত্তি খাতুনের কাছে লিখে দেন।
এই দম্পতির ঘরেই বঙ্গবন্ধুর জন্ম। মার্চ 17, 1920। এটি একটি বুধবার ছিল।
টুঙ্গিপাড়া শেখের বাড়ি ছিল বিশাল। 200 বছর আগে চারটি বড় ভবন নির্মিত হয়েছিল।
রাজমিস্ত্রিরা কলকাতা থেকে এসে গৃহস্থালির কাজ শুরু করে। এটি 1854 সালে শেষ হয়। ভবনগুলো দিন দিন জরাজীর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
তারা আর বাসযোগ্য ছিল না। এসব ভবনের পাশে টিনের ঘর তৈরি করা হয়েছে। এমন একটি ঘরে বঙ্গবন্ধুর জন্ম।
বঙ্গবন্ধুর দাদা শেখ আব্দুল মজিদ আকিকা তার নাম রাখেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি তার মেয়েকে বললেন, মা সায়রা, আমি তোমার ছেলের নাম এমনভাবে রেখেছি যে এই নাম সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত।
এই নামটি সত্যিই বিশ্ব বিখ্যাত। তিনি আমাদের রক্তে মিশে আছেন। তাঁর আদর্শে আমাদের হৃদয় আলোকিত হয়।
বাবা-মা বঙ্গবন্ধুকে ডাকতেন 'খোকা'।
শেখ লুৎফর রহমানের পরিবারে চার মেয়ে ও দুই ছেলের জন্ম হয়। দুই মেয়ের পর প্রথম ছেলে শেখ মুজিবুর রহমান।
তারপর দুই মেয়ে আর এক ছেলে। বাবা-মায়ের প্রথম ছেলে মুজিব পরিবারের চোখের মণি হয়ে ওঠেন।
পরিবারের সবার গভীর ভালোবাসায় কেটেছে মুজিবের শৈশব। বাবা-মা, ভাইবোন সবাই তাকে ভালোবাসে।
প্রেম-মমতা-আরাধনায় পূর্ণ। বিশাল শেখ পরিবারের সবাই খোকার কথা বলতে খুব দুর্বল।
শৈশবের দিনগুলো কত সুখের ছিল! ফসলের মাঠে, হেমন্তের নীল আকাশের নিচে, গ্রামের রাস্তার ধুলোয়, বর্ষার বৃষ্টিতে ভিজে, শীতের কুয়াশায় পায়ে শিশির ভেজায় মুজিব বাড়তে থাকে।
ব্যাগের দিন কাটে নদীতে লাফিয়ে ও সাঁতার কেটে। তাল গাছে পাখি বাসা বানায়। পাখিরা কিভাবে বাসা বানায়? ফিশ রো খাল, পুকুর বা নদীর ধারে গাছে বসতি স্থাপন করে।
হঠাৎ পানিতে ঝাঁপ দেন তিনি। ডুব দিয়ে মাছ ধরুন। মুজিব পাখিটিকে মাছের পাখনা দিয়ে দেখলেন। ভোরবেলা কবুতরের ডাক তাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে।
বাংলার প্রকৃতি তাকে আকৃষ্ট করেছিল। শৈশবেই তাঁর হৃদয়ের প্রতিটি স্থান দখল করে নিয়েছিল এই দেশ।
একদিন কোথা থেকে একটা বাবুই পাখি নিয়ে এল। আরেকদিন একটা পাখি নিয়ে এল। বাচ্চাদের সাবধানে খাওয়ান। তারপর বানর আর কুকুর বড় হতে থাকে।
এই দুটি প্রাণী তাঁর প্রতি এতটাই ভক্ত যে তারা যা বলে তাই করে। যতক্ষণ সে বাড়িতে থাকে, তার একটা বানর আর একটা কুকুর থাকে। শালিকের ছানা আর ময়না ছানা কথা বলতে শিখেছে।
বাঁশি বাজাতে শিখেছে। এই পোষা পাখি ও পশুদের প্রতি তার অপরিসীম মমতা। তাদের কেউ অবহেলা করলে তিনি তা সহ্য করতে পারতেন না।
শেখবাড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে সীমান্তে একটি সরু খাল। শেখবাড়ির অফিস খালের পাড়ে। রান্নাঘরের পাশেই ওস্তাদ, পন্ডিতমশাই আর মৌলভী সাহেবদের থাকার ঘর।
তিনজনই শিক্ষক। মুজিব এই শিক্ষকদের কাছ থেকে বাংলা, ইংরেজি, পাটিগণিত ও আরবি শেখা শুরু করেন।
বাড়ি থেকে মাইল খানেক দূরে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়। মুজিব এই স্কুলে ভর্তি হন। তিনি এই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। বর্ষাকালে নৌকায় করে স্কুলে যেতে হয়।
একদিন ছুটি কাটিয়ে বাড়ি ফিরছেন। খালে নৌকা ডুবে যায়। পানিতে পড়ে যায় মুজিব। ঘটনা শুনে মা খুব ভয় পেয়ে যান। তিনি তার ছেলেকে আর কখনো ওই স্কুলে পাঠাননি।
শেখ লুৎফর রহমান গোপালগঞ্জ শহরে কর্মরত ছিলেন। মুজিব আব্বার কাছে গেলেন।
গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। মা শহরে যাননি। কারণ তিনি তার পিতার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি দেখাশোনা করতেন।
মুজিবের দাদা আর দাদীর বাড়ি পাশাপাশি। তিনি তার মা ও ভাইবোনদের নিয়ে দাদির বাড়িতে থাকতেন। তিনি গোপালগঞ্জে গিয়ে বাবার কাছে থাকেন।
বাবার আলিঙ্গনে অধ্যয়ন ঘুম. মা যেমন ভালোবাসে, তেমনি বাবাও ভালোবাসে।
পড়াশোনা চলছে গোপালগঞ্জে। মাঝখানে একবার বাবা মাদারীপুরে বদলি হয়ে যান। কিছুদিন পড়াশোনার জন্য মাদারীপুর যেতে হয়েছিল।
পরে তিনি গোপালগঞ্জে ফিরে আসেন। তার যৌবন এখানেই কেটেছে।
মুজিব ছিলেন খুবই রোগা। মা সব সময় ব্যস্ত থাকতেন কিভাবে তার শরীরের উন্নতি করা যায়। বড় বোনেরা ব্যস্ত ছিল। তিনি তার ভাইয়ের যত্ন নিলেন।
তার ভাইবোনেরা তাকে 'মিয়াভাই' বলে ডাকতেন। তাকে দেখে গ্রামের মানুষের কাছে 'মিয়াভাই' হয়ে ওঠেন। ওই বয়সে গ্রামের মানুষের সঙ্গে সহজেই মিশে যান তিনি। গ্রামের ওবাড়ি-ওবড়ি যাচ্ছে।
সবার নজরে নিচ্ছি। বেশ ব্যস্ত.
এদিকে মা তার সন্তানকে নিয়ে ব্যস্ত। কিভাবে শিশুর শরীর সুস্থ রাখা যায়?
এক গ্লাস দুধ নিয়ে ছেলের পিছনে ছুটছে। ঘরেই তৈরি হচ্ছে ছোলা, মাখন, ঘি। ছেলেকে সময়মতো খাওয়ানোর চেষ্টা, বাগানের ফল ও নদীর তাজা মাছ হাতে রাখা হয়। এর পরও শিশুটির স্বাস্থ্য ভালো নেই। ছিপছিপে দেহ বা পাতলা দেহ. এ নিয়ে মায়ের আক্ষেপের সীমা নেই।
ঘরের এমন ভালো খাবারের দিকে মন দেননি মুজিব। সে ভাত এবং মাছের স্যুপ পছন্দ করে। আমি ডাল এবং সবজি পছন্দ করি।
খুব সাধারণ খাবার কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুধ, কলা ও গুড় থাকতে হবে।
ছোটবেলা থেকেই মুজিব খুব দয়ালু। মানুষের কষ্ট তিনি সহ্য করতে পারেননি। জনগণের প্রতি গভীর সহানুভূতি। তখন শিক্ষার এত সুযোগ ছিল না। অধিকাংশ মানুষই ছিল দরিদ্র।
তিনি একটি ধনী বাড়িতে একটি জায়গা থেকে পড়াশুনা. স্কুল চার-পাঁচ মাইল দূরে। সকালে ভাত খেয়ে হাঁটতে হতো। সারাদিন আর খাওয়া হয় না। স্কুল ছুটির পর আবার একই পথ অনুসরণ করুন।
স্কুল থেকে ফেরার পর এই ছেলেদের বাড়িতে নিয়ে আসতেন। বাড়ি ফিরে দুধ-ভাত খাওয়ার অভ্যাস ছিল। সে খাবার সবার সাথে খেতেন।
মুজিবকে প্রতি মাসে বেশ কিছু ছাতা কিনতে হতো। কারণ কি?
দেখা গেল কোনো গরিব ছেলে ছাতা কিনতে পারে না। প্রখর রোদে চার-পাঁচ মাইল হেঁটে স্কুলে যেতে হয়। বর্ষাকালে যেতে হয় এবং মুষলধারে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। তিনি তাদের ছাতা দিতেন।
বাড়ির প্রবেশপথে একটি আম গাছ ছিল। স্কুল ছুটি হলে মা সেই আম বাগানে দাঁড়াতেন।
এমনই একদিন মা দেখলেন তার সন্তানকে একটি মাত্র কাপড় নিয়ে হাঁটছে। পায়জামা-পাঞ্জাবি পড়ে স্কুলে যেতেন।
তিনি শীতকালে চাদর পরতেন। সেদিন শুধু চাদর গায়ে দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। মা অবাক। কী ব্যাপার, পায়জামা-পাঞ্জাবি কই?
জানা গেছে, তিনি তার পায়জামা একটি পাঞ্জাবি ছেলেকে দিয়েছিলেন। ছেলেটির জামাকাপড় সম্পূর্ণ ছিঁড়ে গেছে। পরার যোগ্য নয়।
মাঘ মাসে একবার খুব ঠান্ডা পড়ত। দিনরাত ঠান্ডা থাকে কনকনে।
একদিন এভাবেই বন্ধুদের সাথে বাসায় ফিরছি। সে দেখল রাস্তার ধারে এক বৃদ্ধ ভিক্ষুক বসে ধাক্কা খাচ্ছে আর কাঁপছে আর কাঁদছে। সে তার চাদর খুলে বৃদ্ধের চারপাশে জড়িয়ে দিল।
মানুষের প্রতি ভালোবাসা নিয়েই মুজিবের জন্ম। তিনি বড় হয়েছেন তাই বাংলার মানুষের নেতা হতে পেরেছেন।
দেশ ও জনগণের প্রতি ভালোবাসাই ছিল তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র।
0 মন্তব্যসমূহ